সাম্প্রতিক

নস্টালজিক বোধ । রায়হান রাইন

নস্টালজিক বোধ

*
রম্বসের কর্ণ ধরে যতই তুমি টানা-হেঁচড়া করো, সে তার সমদ্বিখণ্ডিত করার নীতি থেকে সরে আসবে না।

*
তুমি কি কখনো হতে পারবে দ্বিঘাত সমীকরণের ভেতর লুকিয়ে থাকা শূন্য, যা সবকিছুর মূল্য ধার্য করে?

*
আমি কখনোই লসাগু হতে চাই না। তুমি নিজেই গসাগু হয়ে আমাকে ঐ প্রান্তে ঠেলে দাও। শুধু একটা গোপন সমঝোতা আমাদেরকে টিকিয়ে রাখে, আমরা পরস্পরকে ক্ষমা করে যাই।
 
*
দেখলেই বোঝা যায়, কে নির্ণায়ক। ধোপ-দূরস্ত পোশাক, চোখের ভেতর পুষে রাখা সংশয়। এ নিয়ে উৎপাদকের কোনো মাথা-ব্যাথা নেই। তার কিছুই করার নেই নিজের কাজটুকু করে যাওয়া ছাড়া। কখনো মনে হয়, এই শ্রমিকেরা বীজগণিতের রাশি, আলফা বিটা বা গামার মতোই অনির্দিষ্ট আর ঈশ্বরের মতো নির্বিকার।
*
ভাগশেষগুলো দেখতে কী করুণ, প্লেটে কিংবা টেবিলে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্টের মতো।
*
লব আর হর পরস্পরকে দেখে বটে, কেউ কাউকে ছুঁতে পারে না। ভেতরে ভেতরে ঈর্ষায় পুড়তে থাকে সমান না হতে পেরে। চির-প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুজন যেদিন পরস্পরের সমান হয়, সেদিন কারো অস্তিত্বকেই আর খুঁজে পাওয়া যায় না, দুজনে মিলে যায় একদেহে।
*
সমীকরণ সবার অগোচরে থাকে। সে আছে বলেই উচ্চনিচ, বিবাদ-বৈষম্য, এইসব আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু কিছুই সমান নয়। সে যেন কোথাও নেই, অথচ আছে যেন।*
কোনো একদিন ঝড় তুলবে বজ্রগুণন। জায়গা বদল করবে উচ্চ আর নিম্নবর্গেরা, সেইদিন গুরু আর চণ্ডালে একপ্লেটে ভাত খাবে। এক গোপন শূন্যের সঙ্গে লড়াইয়ে মেতে উঠবে বিপ্লব।

*
স্থানাংককে কেউ কেউ মৌলবাদী বলে। আসলে তিনি নীতিশাস্ত্রে পণ্ডিত। সবকিছুকে ডান আর বাম দিয়ে বুঝে থাকেন।

*
পৌনপুনিক কখনোই ঘুমায় না। এদের ধারণা এরা অনন্তকে বোঝে। সাধুসন্তদের সাথে এদের ওঠাবসা। চোখে মুখে খানিকটা সন্ন্যাসভাব আছে।

*
সেইসব স্টেশন পেরনো ট্রেন, সুদখোর, তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওঠা বানর, বয়স হওয়া বাবা-মা-ভাই-বোন যারা ক, খ কিংবা গ-এর মতো রাশিমালা তাদের খুব নিকটেই থাকে শূন্য কিংবা অনন্ত। এরা আমার বয়সের মতো, প্রতিদিন বিনিময় করে চলে এক আর শূন্যের ভেতর।

এই লেখাগুলো ভাল লাগায় রায়হান রাইন’র facebook সাইট থেকে এখানে আনি ।

Save

রায়হান রাইন

জন্ম: ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ, সিরাজগঞ্জ। অধ্যয়ন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, দর্শন বিষয়ে। পেশা: শিক্ষকতা, সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ: আকাশের কৃপাপ্রার্থী তরু, পাতানো মায়ের পাহাড়, স্বপ্নের আমি ও অন্যরা, কবিতা: তুমি ও সবুজ ঘোড়া। উপন্যাস: আগুন ও ছায়া। সম্পাদনা: বাংলার ধর্ম ও দর্শন। অনুবাদ: মনসুর আল-হাল্লাজের কিতাব আল-তাওয়াসিন, পাবলো নেরুদার প্রশ্নপুস্তক। আগুন ও ছায়া উপন্যাসটি প্রথম আলো বর্ষসেরা বই-১৪২০ পুরস্কার লাভ করে। প্রোফাইল ছবির পেন্সিল স্কেচ: মাসুক হেলাল

লেখকের অন্যান্য পোস্ট

লেখকের সোশাল লিংকস:
Facebook

Tags: , ,

লেখকের অন্যান্য পোস্ট :

সাম্প্রতিক পোষ্ট