সাম্প্রতিক

এপিটাফ ও মনসাদংশনের রাত / ইউসুফ বান্না

Banna jpg 2এপিটাফ ১

সে বৃষ রাশির জাতক। বুলফাইটের মাঠে  যেমন বুল বিক্ষত হতেই খেলতে নামে তেমনি অশ্বারোহীর বল্লম থাকে মৌলিকত আক্রমন উদ্যত। বৃষ ও মানুষ উভয়েরই আক্রান্ত হয়ার সম্ভাবনা হান্ড্রেড ভারসেস হান্ড্রেড পারসেন্ট।সম্ভাব্যতার দ্বন্দ্বে দুপক্ষই জয়ী – এমনি গণিত – সমীকরণের দ্বিবিধ সল্ভের মতো। দুটোই একসাথে সত্য হবেনা কখনো।

এও কি একরকম পরাজয় নয়? মিথ্যে নয়? এখানেই ধরে নেওয়ার প্রায়োরিটি আসে – সিদ্ধান্তের প্রশ্নে এভাবেই আমি একলা হয়ে যাই, ছায়াও পড়েনা। থাকি

অথবা থাকিনা এমন অস্থিতি নিয়ে তৈরি হয় সময়ের যাদুঘর। যার ঘর দুয়ার জানালা ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায় – ঠিকানা বদলের মতো। বস্তুর গতি ও অবস্থান যেমন একত্রে জানা সম্ভব না আমার অস্থিতির দ্বৈততা তেমন একসাথে সত্য নয়।

সো বেঁচে থাকাটা শুধু ফিজিক্স নয় , অনেকটা ফ্যালাসিও বটে।

ঘুম ভাঙতেই নিজেকে মনে হয় পেন্ডুলাম। অসিলেটিং বডি। বাইনারি অস্থিরতা।

সে হয় দ্বিভাজনে দুলছে অথবা – অফ বা অন –মরে যাচ্ছে যে কোন দ্বিতীয় দফায়।

আমি বিশ্বাস করিনা যদিও তবু মারা যাই যদি এ নাথ আশ্রমেই যাব। নিভৃতির কারন হবে ভিন্ন। বর্তমান আমি কি কেবল বর্তমানেই থাকি? যে আমার অতীতে থাকে কতটা সাবেক তাকে ছেড়ে এসেছি – লগ্ন দিয়েই কি শুধু তার বিচার করা যাবে?

তুমি সন্দেহ, তুমি বাঁচার ইচ্ছা নষ্ট হয়া দিনগুলো। তুমি নিউমেরোলজিকাল মৃত্যু।শুন্য বিয়োগ শুন্যের মতো নৈঃশব্দ। বধিরতার সাথে অন্ধতার যতটা ফারাক তাই মাধ্যাকর্ষণের মার্গ। তুমি দশা প্রাপ্ত যদি হও তবে মানুষ ভজন মিথ্যা। সহজ মানুষে আর ভজবেনারে মন দিব্যজ্ঞানের আশা। ভালোবাসার ভেতরে দুর্গ – দুর্গের ভেতরে তুমি দুঃস্বপ্ন দেখার ইচ্ছা –আমাকে স্বেচ্ছাচারী করে দিলে আমি দিন দিন তফাৎ হতে থাকি পরিনামে।

আমি তুমি সে সকলি সকলের চেনা। সামগ্রিক নিশ্চেতনার খুব কাছাকাছি অভিকর্ষনে জলের মতো ঘুরে ঘুরে তারা এক বা একা হয়ে বাঁচে আর একটা মৃত্যু রচিত হতে থাকে সেই সাথে।

#‘দখিন হাওয়া’,৩১/০৫/’১৪,রাত সাড়ে দশটা

এপিটাফ-২                                                           

সে প্রস্তরখণ্ড তোমার শিরোনামের ছায়া অকপটে খোলা দেহ- শেষ বিদায় স্টোরে দামাদামি শেষে অগ্যস্তের অন্তিমে শয্যা- এ মরে যাওয়া শিরোধার্য
হৃদয় খুঁড়ে বেদনাজাগানিয়া তোমার চলিষ্ণু গল্প যদি এখানেই শেষ হয়ে যায় আর পাণ্ডুলিপির হাত থেকে উল্টে পড়ে লেখার দোয়াত তবে
সাদা পৃষ্ঠার
সারি থেকে বিষ্কলঙ্ক মুখ ঢেকে পরতেপরতে আড়াল হয়ে যাবে হনন বাসনা।অথচ উদ্যত ছুরিকায় কীর্ণ অনুলিপি থেকে ঠিকই রক্ত পড়ে আর ক্ষতগুলো কবিতায় স্থায়ী হয়ে যায়।
থোড় বড়ি খাড়া- মৃত কবিদের মাংস কৃমি খুঁটি সে উঠে আসে- খাড়া বড়ি থোড় – বিষণ্ণ শিরদাঁড়া।মারি ও মড়কের পিঁজরাপোল থেকে তার চোখ ও চশমার কাঁচে জমেঅমাবস্যার ক্ষোভ –
প্রশ্নময় অক্ষমতা – জন্মদাগের মতো আলজিভে অনুক্ত মৌনতা।কারও বলায় থোরাই যায় আসে তবু তার ক্ষুৎকাতরতা মিথ্যে নয় আমিতো জানিলেখাগুলো সব এপিটাফ – শব্দে শব্দে জীবন ক্ষয়ে যাওয়া।জড়ত্বে প্রকার পেয়ে গেলে তার মসিকান্ডের এপিফেনি হয় আর প্যারাডাইম শিফট হতে থাকে।সে অন্ধ শকুন একবসে থাকে বোধের উপর।
মনরেমানসুর্বরা মাটি তোর শস্যের জঠরে কাঁদে আর শেকড়ের জাল বুনে ফাঁদ পেতে থাকে জনম জননে। 
আমিতার উৎস খুজে ফের প্রারম্ভে ফিরে এলে মনে হয় বৃথা ক্ষয়বৃথাই অক্ষয় বাসনা। যে পদ ভজি – যে শব্দ
বুনে শস্য রচনা করি – আর্ষপ্রয়োগেই তার বিজের উদ্গম হয়অঙ্কুরে জীবন  নিরত প্রান্ তরঙ্গে একটি প্রজাপতি
 ডানা ঝাপ্টালেসে বিধির কাঁপন থেকে ঝড় হয় লণ্ডভণ্ড নির্বাসনে। সে এক উম্মাদীানি মনোবৈশাখী বুঝি 
নিজেকেই অতিক্রম করে যায় বারে বারে আর অন্তর্যামী হতে হতে তাবৎ আমিত্বছিটকে গেলে দিগবিদিক –
তোমার বয়সের গাছ পাথরে শৈত্য চলে আসে। মধ্যবর্তী বিষণ্ণতা কুয়াশা চাদরের আড়ালে তোমার নিঃশ্বাস 
চুরি করে বাঁচে
মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান – কথাটায় বৈষ্ণবী সমকাম আছে। ভাট ফুলের 
ঝাঁঝাল এরোমার সাথে ভেজা শিশিরের শব্দ জুড়ে আছে 
তার এক অতীত জীবনী। যে চরিত্রইছকি রাঁধা হব কেন 
রাই জানতোআমি তোমার নির্বংশের শিশ্নকাতর ভাই 
তোমাকে কামনা করি আবার দেবী ভজনায় তুমিই কখনো এক স্বৈরিণী 
নারী ভাস্কর্য হয়েউঠো ধর্ম  জিরাফ মেলাবার ট্রমা নিয়ে আমি ভাঙা দরজায় খিল তুলে নিজের 
অবিচুয়ারি লিখতে বসি ঘোরের শমন নাকি – ভাঙা ঘরে 
চাঁদের আলো ধরতে গেলেইফাঁকি– এমনও জোস্নায় সই আমি
যেন ছায়া হয়ে রই আর চাঁদ নিভে জেলে পর অদ্ভুত 
আঁধারে এক দিগন্তের আড়ালে হেটে হেটে হারিয়ে যেতে দেখি আমার থার্ড পারসনসিঙ্গুলারিটি

পহেলা জুন, ভোর পৌনে ছয়টা,দখিন হাওয়া 

মনসাদংশনের রাত

মৃত্যুর চাঁদোয়াকে উসকে দিতেই গোধূলিসন্ধি শেষে রাত নামে চরাচরে।

এমন নিশাচারি যেন বধ হতে পারে আজ রাতে সমস্ত অরণ্যানী জুড়ে সর্বোচ্চ নৈশব্দে  

ঘোগেরা সব বোবা হয়ে যায়।

আজ রাতেই ওঁত পেতে রাখা ফতনা ডুবে গেলে শেষ হবে জপ ও যাপনের যজ্ঞ।

নিরুপায় যে জন শেষ ঠাই ভেবে আঁকড়ে ধরেছিল নুনের সৌষ্ঠব – নিমজ্জনের অধিবাসনায় তার জলধি সমাধি হল শ্বাসের বুদবুদে,                                                                                  এবিধ টঙ্কার বড় ঠুনকো – ঝঙ্কারে সঙ্গতহীন ত্রাহি জলসায় কোন পরিত্রান থাকেনা সঙ্গীতে

তবু সুর স্বননে কাঁপে – আগুনের পঙক্তিতে কেঁপে উঠে শিখা – মোম গলে যায় ছকে –                      দহন নিভে যায় নিঃশব্দ শীৎকারে

তোমাকে হরন করেই অহমে জাগে দেহের তৈজস                                           সমাকলনের শেষ ধাপে নীড়ের স্বপ্নে বাড়ি ফেরা হয় কি হয়না –

বিদায়ী সময়ের দয়িতা দৃশ্যতপরতায় অদৃষ্টের সাথে পাশা খেলে জিতে যায় পরবাস

নিজ গৃহে লগ্নে লগ্নে গমনের ঘণ্টা বাজে –

প্রস্থানব্যাপী এক শমন বসে থাকে আসা ও যাওয়ার কমন করিডোরে

নিগ্রহ নও – বিগ্রহে সমর্পিত তুমি দেবত্ব স্বীকার করে নাস্তিক হয়ে যাও,

বিষের ওঙ্কারে শঙ্খনাদ হলে ত্রিশঙ্কু বলে উঠে কবুল কবুল –

নীলের আসঞ্জনে ফেপে উঠে দেহ

অঘোর সাধুর সাথে আর কেউ ছিলনাতো মৃত্যুসঙ্গমে                                                শ্মশান বুঝি ঘর – বসতির পরিমিতি বেহুলা বাসর                                                     অনঙ্গ পুরানে যুগলবন্দী এই এক অমোঘ আগর

ইপ্সিত লক্ষের দিকে ফনা তুলে বসে থেকে                                                   মৃত্যুকেই তাক করে মেরে ফেলে  চাঁদসদাগর

# তিরিশে জুন, দখিন হাওয়া

ইউসুফ বান্না

আমি একজন ন্যূনতম মানুষ । স্বার্থপর, ভণ্ড, জ্ঞানপাপী, মর্ষকামী, গোঁয়ার, কবি । চিন্তার স্বেচ্ছাচারিতায় ফ্যাসিবাদী । হারিয়ে যেতে চাওয়া গোষ্ঠীর অপরাজেয় নৃপতি আমি-মরে যাওয়া আমার কাছে চূডান্ত রোমান্স । আমার কিছুই এসে যায় না উচ্ছন্নে পার্বণে পালা মৌসুমে কারণে কার্যে অকারণে । আমি কি যেচে এসেছিলাম পৃথিবীতে ? যে সময়ের ত্রাহিকালের আমি একলা দোসর-? আমার এডিট করা নাম ইউসুফ বান্না । পেটের দায়ে সাংবাদিকতা করি-কবিতা আমার পুরনো পাপ । ছবি আঁকি এবং ছবি আঁকাকে ধর্মীও আচরণের মত জ্ঞান করি । ঈর্ষা করি তাদের যারা যা চায় তাই আঁকতে পারে ।

লেখকের অন্যান্য পোস্ট

Tags: ,

লেখকের অন্যান্য পোস্ট :

সাম্প্রতিক পোষ্ট