সাম্প্রতিক

স্বপ্ন । সুপ্রভা জুঁই

একটা স্বপ্ন দেখলাম। জেগে দেখা স্বপ্ন। প্লিজ এটার নাম মোহ দিবিনা। এটা সত্য হওয়ার খুব সুযোগ আছে যে! একটা বাড়ি হবে আমাদের। এ শহরেই। শহর যে খুব প্রিয়, এখান থেকে যেতে চাইনে তাই। বেশি গ্যাঞ্জামের ভয় পাসনে। বাসাটা ধানমন্ডি লেকের পাশে নিব। দোতলা বাসা। সামনে একটু জায়গা থাকবে কিন্তু। জানিসই তো আমার গাছ লাগানোর বাতিক। এখানটায় দুজনে মিলে পুষ্প বৃক্ষ বিহঙ্গ পুরাণে মেতে উঠবো! তুই একটা জুঁই ফুল লাগানোর জন্য ঘ্যানঘ্যান করবি। আমি রাজি হব না। আরেকটা জুঁই কেন থাকবে! হিংসুইট্টা তো আমি!

দোতলা বাসাটা হবে কেমন জানিস? কাঠ আর মাটির কম্বিনেশনে। মডার্ন আর এন্সিয়েন্ট এর একটা ফিউশন! তুই তো আর্কিটেকচারে পড়িস না তাই তোকে বোঝাতে পারছিনা। ইশ আমার মাথার ভেতর ঢুকে যদি দেখতে পারতি! কি যে দারুন। সামনের বাগানে সন্ধ্যা প্রদীপ জালানো হবে রোজ। কোন প্রাচীর থাকবেনা কিন্তু। দরজায় থাকবে নেমপ্লেট… তুই নাম বলে দিস। আসল নাম না, বানিয়ে বানিয়ে। আসল কেউ তো নেই এখানে।

আচ্ছা একসাথে থাকার কথা শুনে আবার ভয় পেয়ে যাচ্ছিস না তো? প্লিজ ঘাবড়ে যাসনে। শোন, তুই না একটা বিশাল ট্রেন চাচ্ছিলি? বলছিলি নড়বড়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মনে হয় নিজেকে। ট্রেনে করে তোর বন্ধু আসবে, সেয়ানা সেই বন্ধু। যাকে ছাড়া তোর মুক্তি নাই, যার জন্য এত বেদনা তোর, যার জন্য ঝাঁজরা তোর বুকের পাজর। তোর নড়বড়ে স্টেশনে আমিও আসতে চাই। তোর সাথে সবুজ পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো। তোর বন্ধুর মুখ দেখে তোর সুখ, আর তোর সুখে আমার। আমার তো এক বুক ভালবাসা। ম্যাজিক আছে এখানে। যতই ভালবাসি শেষ হয়না। এই ভালবাসা না দিতে পারলে যে কি কষ্ট সে তুই কি করে বুঝবি!

এই বাড়িটাই হবে তোর স্টেশন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করবো এখানে। আমি রোজ আদর করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিব। তুইও দিস মাঝে মাঝে। দোতালায় বিশাল একটা ওপেনিংস থাকবে বিছানার একদম মাথার কাছে। যদি ট্রেন চলে আসে তাই। আর একটা বড় টেরাস বেডরুমের সাথেই। ঘুম না এলে হাঁটবো দুজনে হাত ধরে। আমরা যেখানে কাজ করবো সেই জায়গাটা হবে বিশাল, ডাবল হাইট। সাথে কুকিং স্পেস, জুস বার। তোর রান্না করতে একদম ভাল্লাগেনা জানি কিন্তু শুধু ভেবে দেখ দুজনে মিলে পুরোনো বংলা সিনেমার গান ছেড়ে তোলপাড় করে রান্না করবো! ভাবতেও কি সুখ!

1526221_10202084277782345_1273706138_nআর আমাদের সাথে আরও অনেকে জুটে যাবে কিন্তু, যারা তোর বন্ধুকে দেখতে এসেছে। ওরাও কাজ করবে এখানে। ঝাড়পুছ দিবে আমাদের সাথে পুরো স্টেশন। বাগানে কাজ করবে আমার সাথে। ওরা গান গাবে, কবিতা লিখবে, সৃষ্টির নেশায় মেতে থাকবে সর্বদা বন্ধুর আগমনের আনন্দে। কোন কুয়াশা থাকবেনা দেখিস। সব কেমন উড়িয়ে দিব আমরা! ট্রেন আসবেই। তোর বন্ধুর হাসিমাখা মুখ তুই দেখবিই রে পাগল। আমার সোনা পাগল…

এত খাওজানি নিয়া আপনারা ঘুমান ক্যামনে!!

কয়দিন ধরেই ভাবতেছিলাম যে এইটা নিয়া লেখা দরকার। কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকায় নিরপেক্ষ না থাকতে পারার ভয়ে লেখা হয়ে ওঠে নাই। লেখাটা দায়িত্ব বলে বোধ হচ্ছে (এইটা সান্ত্বনাসূচক একটা বাক্য একেবারেই নিজের জন্য। আসলে দায়িত্ব পালন করিনা তেমন।)… বিষয়টা হল ধানমন্ডি লেক নিয়া। এখনও পর্যন্ত ফেবুর কোন বুন্ধুরে এই নিয়া উচ্চবাচ্য করতে দেখি নাই!!! ধানমন্ডি লেক পব্লিক প্লেসের ক্ষেত্রে এতটাই ফোকাসে আছে যে এর আইডেন্টিটি শুধুমাত্র ধানমন্ডি এলাকাতে আর সীমাবদ্ধ নেই। এইটা পুরা ঢাকার একটা বিনোদনের জায়গা। এবং এমন একটা অনুভূতি আম জনতার মাঝে তৈরি হতে দেখেছি যেটা পরিষ্কার প্রমাণ দেয় যে এই জায়গাটা তার, তার একটা অংশ। বিভিন্ন ইনফর্মাল প্রোগ্রাম যেটা মানুষকে আরও বেশি করে কাছে টানে তার একটা দারুন জায়গা হল এই ধানমন্ডি লেক। আর হবেইনাবা কেন!! আর্বান সেটাপে এই জায়গাটার প্ল্যানিং টাই যে এমন!! লেকের পাশ জুড়ে নানা গাছপালা, বাধানো ফুটপাথ, রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ, ছোট ছোট খাওয়ার দোকান, আর জাতির পিতার বাড়ি… সব মিলিয়ে এক দারুন ব্যাপার। এই এলাকায় স্কুল কলেজ ভার্সিটি বেশি। গরীব পোলাপাইন সব। আড্ডা দিতে বা প্রেম করতে ফাস্ট ফুডের দোকানে মাসের সব দিন তো বসা চলে না!! হয়ত কোনদিনই না… তাই এখানে এমন অনেকেই আসে। সব ধরনের সম্পর্কের মানুষ। বন্ধু, প্রেমিক জুটি, পরিবার, ব্যায়াম করতে দৌড়াতে, নিয়ম করে গান গাইতে… ধুন্ধুমার পরিবেশ!!!

আসলে লেকের বর্ণনা দিতে ঠিক নয় বরং এক অভিজ্ঞতা বলতেই লেখা। সপ্তাহ দুই আগে থেকে অফিস শেষে সন্ধ্যার পর বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতাম এখানে। এর আগেও দিয়েছি। সব কিছুই ঠিকঠাক… বা দিকে গানের আসর চলছে যেটা রোজ হয়… ডান দিকে যারা আছে তারাও পাল্লা দিচ্ছে থেকে থেকে… কখনও চেনা গান বেজে উঠলে আমরাও গলা মেলাচ্ছি। চা খাচ্ছি, সিগারেট খাচ্ছি, আগুন না থাকলেও পাশে অপরিচিত জনের কাছ থেকে সেটা নিতে একদম অস্বস্তি হচ্ছেনা…থেকেথেকে বাদামওয়ালা, চানাচুর, মুড়ি, ফুল মালা, চা, পান সব কিছুই একবার করে দেখা দিয়ে যাচ্ছে… পুরনো টোকাই বন্ধুদের দেখে আড্ডা দিয়ে কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিচ্ছি… কেউ কেউ এরই মাঝে আলোর বল দিয়ে খেলছে… সব কিছুই ঠিক যেমন থাকার কথা তেমনি ই আছে…

10624970_10203701995344273_6923304423796231839_n 10570386_10203701997744333_3942068748939110600_nএর মাঝে মঞ্চের দুই পাশ থেকে শুরু হল ভেঁপু ভেঁপুয় আওয়াজ… কি ঘটনা!! পুলিশ সবাইকে এই মঞ্চের এলাকা থেকে বের হতে বলছেন… নিরাপত্তার খাতিরে… ধরে নিলাম তাই ঠিক… মানে মঞ্চের উপরে খাওয়ার দোকানে বসে থাকো ব্যাপার না কিন্তু এখানে বসে থেকো না… প্যাঁচানো মনরে পাত্তা না দেই, ধরে নিলাম যে আসলেই নিরাপত্তা দরকার… পুরা জায়গাটা দুম করে মরে গেল… সবাই উঠে গেল … কেউ কেউ পুলিশদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে নিলে তারা নোংরা ভাষায় কথা বল্ল…এত সময় তাদের নেই…

পরপর তিনদিন এই কাজ হল আর তিনদিনই বেগার হেঁটে বাড়ি ফিরলাম। বিপত্তি টা ঘটলো চতুর্থ দিন। সেদিনও একটা নির্দিষ্ট সময়ে বাজিল ভেঁপু কিন্তু আজকের ভাষা আলাদা…

যারা যারা সাথে মেয়েছেলে নিয়ে বসে আছেন তারা তারা উঠে পড়ুন। ছেলে মেয়ে একসাথে বসে থাকতে পারবেন না…

এইটা সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে কি না বুঝতে সবাইকে টর্চের আলোয় প্রুফ দিতে হচ্ছিল!! বুঝলাম আমি মেয়ে নই, মহিলাও নই, নারীও নই… আমি তুচ্ছ মেয়েছেলে… আমার যোনি আমার আসল পরিচয়। আমার দেশে আমার টাকায় আমার জন্য বানানো কোন স্থানে আমি আমার ছেলে বন্ধুদের সাথে বসতে পারবোনা। তেমনি ছেলেরাও নয়। শুধু ছেলে বা শুধু মেয়ে বসে থাক। শুদ্ধ পবিত্র হয়ে থাক। সফল সমাজ!!!!

পরে এক অপ্রীতিকর ঘটনার (না কই আর) দরুন জানতে পারলাম যে এক সপ্তাহ আগে নোটিশ দেয়া হয়েছে থানা কর্তৃপক্ষ থেকে

সন্ধ্যা ৭ টার পর থেকে এলাকায় কোন যুবক / যুবতী প্রবেশ করতে পারবেনা (যুবক / যুবতী কন্সেপ্ট টা পরিষ্কার না)

আরেকটি হল

স্কুল কলেজের পোশাক পরিহিত অবস্থায় এলাকায় প্রবেশ নিষেধ

অই অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে থাকা পুলিশদের টুকরো টুকরো কটা লাইন শেয়ার করি

বুঝলেন না আমরা তো আওয়ামী লীগের গোলাম। আমাদের কি ঠেকা পড়ছে কিন্তু করতে হবে।

সমাজের কথা এইটা। মেজরিটি যা বলতে তাই তো ঠিক! (মেজরিটি সর্বদা সঠিক নয় তর্কে গেলে জেলে যেতে হত নিশ্চিত)

গোলাম মাওলা রনি এই এই এত বড় বড় চিঠি পাঠাইছে যার কারণে এইসব করতেছি ব্লা ব্লা ব্লা……

 

এত চুলকানি!!! এত এত এত এত এত চুলকানি ক্যামনে!!!

7054_10203702041625430_4547652912225366382_n 10400877_10203702045305522_7548580502812753463_n

.                                                                                                               ______ # # #

Jui 2

Save

সুপ্রভা জুঁই

স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়, সম্পাদক : শেয়ালকাঁটা - বাংলা অনলাইন ম্যাগাজিন, প্রধান সমন্নায়ক বাংলাদেশ এর Beta Movement : International Students Short Film Festival

লেখকের অন্যান্য পোস্ট

লেখকের সোশাল লিংকস:
Facebook

Tags: , , ,

লেখকের অন্যান্য পোস্ট :

সাম্প্রতিক পোষ্ট