সাম্প্রতিক

এক গুচ্ছ কবিতা । শুভাশিস সিনহা

ছেঁড়া তারের সেতার

দাঁড়াও অনন্তকাল
মুহূর্তের দেখাদেখি হবে
তারপর চোখের ভেতর
দাউ-দাউ আগুনের হল্কা নিয়ে
তুমি যাবে উত্তরে এবং
আমিও দক্ষিণে

মেরুতে মেরুতে শত বজ্রপাত
বৃষ্টির শলাকা,
হাওয়ার ঘূর্ণিতে ঘর
উড়ে যাবে ঈষাণে নৈঋতে

তাও তিন-মুহূর্তযাপন
বাকি কাল স্মৃতিপিঞ্জিরায়
বন্দী কোনো দৃশ্যভ্রমরার
বোবা গুঞ্জরণ…

কেবলি ঘুমিয়েছিলে,
স্বপ্ন এসে আছড়ে পড়ল
চোখে,
পাপড়ির পাহারা ঠেলে
তোমাকে যে ডেকে নিল
কার্পাসতুলোর বনে,
সাদা-সাদা যন্ত্রণার
ওড়াউড়ি
দেখাবে অনন্তকাল
অন্ধকার-কাঁটা-গুল্মলতা
বিঁধে-রাখা শরীরাশরীর
ভেঙেচুরে দৃশ্য-দিশান্তরে

কেবলি বুঁজেছ চোখ,
গড়েছে উপনিবেশ
দুরন্ত ছবির সেনাদল।

মৃত্যু আলোময়
যদি তার মায়াবি প্রপাতে
ফুঁসে ওঠে দারুণ বুদ্বুদ
জিহ্বা মেলে চেখে নিতে চায়
সোনালি মাছের স্বাদ

তখন জীবন
পাড়ের বসন্ত থেকে
পেড়ে নেবে রক্তাভ শিমুল
পাপড়ি হয়ে খসে পড়বে আয়ু …

রক্তরেণু লেগেছিল ঠোঁটে
ফুলশয্যারাতে
সেটুকুই জ্বলেছে ভীষণ

আকাশে নক্ষত্র থেকে
ছলনার আলোবিন্দু
ঝরে পড়ল চালের ওপর

নূপুরের ছন্দ জাগে
জীবন-মৃত্যুর নাড়িতালে

রক্তরেণু তবু দীপ্তিময়
ঠোঁট থেকে অন্য ঠোঁটে
ধাওন্ত প্রণয়।

অবশেষে আমি নিজে মেঘ
কালো-কালো মুখে
আষাঢ়ের কদমের দিকে
তাকিয়ে ফেলেছি দীর্ঘশ্বাস

তুমি তা-ই বাতাস ভেবেছ
যে তোমার গাছপত্রাবলী
নাচিয়ে গিয়েছে নিশিভর

জলে ভরা মাঠে
হাঁটু অব্দি ডুবে-যাওয়া
ঝড়জ জীবন !

ময়ূর তবুও পাখা মেলে
রঙিন অরণ্যে, কেন
ঝরে গেল সোনালি নয়নতারা
উল্কার মতোন,
বুক-পেতে-দেয়া
জমিনের তলায় লুকানো
ফসলের বীজ
স্বপ্নরেণু
এখনো ওড়ার গান করে

ময়ূর তবুও মেলে পাখা
অবশেষে তুলে নেবে
ক্ষুধা আর তৃষ্ণার নাচন।

সুঁইয়ে সুঁইয়ে বোনা হলো ঘৃণা
রঙিন নকশায়
চুমু খেল বিষ-ওষ্ঠ ছুঁয়ে

দিগন্তে বসন গেল উড়ে
রাঙা অস্তদেহ ঢেকে দিতে

সুঁইয়ে সুঁইয়ে বোনা হলো প্রেম
সাদা সাদা চিকন সুতোয়

দিগন্তে নিকষকালো ষাঁড়
শিঙে তোলে আলোপিণ্ড এক।

শুভাশিস সিনহা

কবি ও কথা সাহিত্যিক।

লেখকের অন্যান্য পোস্ট

লেখকের সোশাল লিংকস:
Facebook

Tags: ,

লেখকের অন্যান্য পোস্ট :

সাম্প্রতিক পোষ্ট