সাম্প্রতিক

কচের আবার জন্ম । নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

এক নদী থেকে স্রোত ঢুকে পড়ে অন্য নদীর জলে। স্রোত গাঢ় হলে অদূরে ঠায় দাঁড়িয়ে সাক্ষী রাতুল বন। আমি আর লিখতে পারি না, অশ্রুর পাঁকে বারবার থমকে যায় আমার ভাঙা আঙুলদল। আমার চোখ, হাত আর পা বাঁধা গুলিবিদ্ধ এক কবির মুখ মনে পড়ে, কবির নাম লোরকা। তাকে ভেবে আমার বিস্তারিত বন বৃক্ষশূন্য হয়ে যায়। বৃক্ষশূন্য বন মানে প্রান্তর এই জেনে আমি দিঠি খুলে রাখি। তুমি তা জানো না, আমি সেই প্রান্তরের বুকে একলা হুহুপাখি।

সেইখানে নদীর কাছে একটি গান ছিলো একা। গান ছিলো ঘুমরহিত অন্ধ এক সরোবরের।

ঘুম নাই প্রিয় নদী, ফুলেরা অ›ধঘুমে,
কান্না আমার শোনো যদি এসো এই জল চুমে।

পাখিরা ঘর বুনে না তো ভয়ে,
মাটির বুকে মাটি যায় ক্ষয়ে,
প্রিয়তম গাছের পাতারা এখন
পোড়া মাটি জুড়ে হয়েছে কাফন,
হাসে না লতারা বাতাসের গানে, বাজে না রুমঝুমে…

ঘাসের অধরে শিশির মেয়েরা আর থাকে না ছুঁয়ে,
সূর্যটাও রোদের দীপে শিশিরে পড়ে না নুয়ে।
বানভাসি জল তোমার কাজল
জনপদ জুড়ে করে যায় ছল।
তারপরে খরা পোড়ায় যতনে আমাদের বাসভূমে। 

ওখানে অদূরে এখনো কি লেলিহান হচ্ছে না অপস্রিয়মান শ্বাপদেরা? আর অদূরে ঘরপোড়া ছাইসমগ্র উড়ে বেড়াচ্ছে এখনো শীতের বাতাসে। শীতের বাতাসে একই সঙ্গে ছাপা হচ্ছে মানুষ ও শ্বাপদের পদচ্ছাপ।

ছাদে যে খেলার মাঠ আছে ওইখানে রোদে রোদে হেঁটে আসো’।
কচ ছাদে গিয়ে হ্যামকে শুয়ে থাকে সূর্যমুখী হয়ে। হাঁটতে ভালো লাগে না তার। আর দেখে সারি সারি দোলনায় শুকোচ্ছে নবজাতকেরা। কচের মনে পড়ে যায় বহুদূর ফেলে আসা সমুদ্রপাড়ের শুটকিপল্লির স্মৃতি। আর শিশুদের গালে গলে পড়ছে রূপবতী সূর্য। কচের মন করলো দেবযানীর গর্ভে জন্ম নিতে আবার। ফলে কচ মনে মনে পিতা বৃহষ্পতিকে স্মরণ করল।

দূর জঙ্গলে একজোড়া অশ্বিনীকুমার গলাধঃকরণ করে বুকের দড়ি ছিঁড়ে শুয়োর আসে তোমাদের শহরে, খুলতে চায় নিরাময়কান্তি নিকেতন। তবু আমরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে ভাবি, আমার কিছু হবে না, আমি মরবো না, আমরা মারবো। কিংবা ভাবি, বেঁচে থাকলে ফলের বাগান করবো, সবজি চাষ করব, ধান লাগাব, সন্তানের জন্ম দেবো, আইসক্রিম খাব, আবার শীতের সন্ধ্যায় জিএনজিতে আশ্লেষে শ্বাসরুদ্ধ চুমু খাব, আবার টানা ছয়দিন কোহেন বা পিংক ফ্লয়েড শুনবো, শুনব মৃত শিবকুমার শর্মার সন্তুর, তিনতালে কৌশিকধ্বনি কিংবা দুটো প্রেম করব কিংবা বারান্দার টবে লাগাব একটি কুঞ্জলতা… কিংবা…। কিন্তু এইসব দিনরাত্রি বড়ই অচেনা। কোনো বাঁচিয়ে চলাই নিরাপদ নয়। তবু বিলাসের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলি না আর, নিশ্বাস জমিয়ে রাখি কিছু। শ্বাসকষ্টের রাত্রি এলে, নক্ষত্রের সেই রুপালি আগুনভরা রাতে জমানো নিশ্বাস খরচ করে চোখে নেবো প্রিয়তম মুখগুলি। তারপর তারা হয়ে যাব। আমি তো স্বাতী তারা হবো। তুমি কোন তারা হতে চাও? বলো!

দেবযানী বলল, ‘কচ! সময় ভালো না। ছাদে যে খেলার মাঠ আছে ওইখানে রোদে রোদে হেঁটে আসো’।

কচ ছাদে গিয়ে হ্যামকে শুয়ে থাকে সূর্যমুখী হয়ে। হাঁটতে ভালো লাগে না তার। আর দেখে সারি সারি দোলনায় শুকোচ্ছে নবজাতকেরা। কচের মনে পড়ে যায় বহুদূর ফেলে আসা সমুদ্রপাড়ের শুটকিপল্লির স্মৃতি। আর শিশুদের গালে গলে পড়ছে রূপবতী সূর্য। কচের মন করলো দেবযানীর গর্ভে জন্ম নিতে আবার। ফলে কচ মনে মনে পিতা বৃহষ্পতিকে স্মরণ করল।

বৃহ®পতি উপস্থিত হলে কচ তার কাছে বর চাইল। বৃহষ্পতি তাকে বলল, ‘এর আগে একবার তোমাকে কৌশিক হয়ে জন্ম নিতে হবে। তারপর শনির বলয়ে পা ঝুলিয়ে বসে সূর্যকে তিনবার তিরস্কার করতে হবে। পৃথিবীকে দশবার ধ্বংস করে আরো তিনবার বানাতে হবে।’
কচ বললো, ‘পারব না। তার চেয়ে ছবি আঁকা ভালো। ছবির মধ্যেই আমি দেবযানীর গর্ভে উদ্গত হবো’।

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

জন্ম : ২৪ আগস্ট ১৯৮১, কক্সবাজার। পড়াশোনা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ চিত্রকলা। প্রকাশিত বই : পাখি ও পাপ (২০১১, কবিতা), শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় (২০১১, মুক্তগদ্য), ডুবোজ্বর (২০১২, গল্প), কাপালিকের চোখের রং (২০১৩, কবিতা) পুরুষপাখি (২০১৪, মুক্তগদ্য), মহিষের হাসি (২০১৫, কবিতা), আরজ আলী : আলো-আঁধারির পরিব্রাজক (২০১৫, প্রবন্ধ) সম্পাদিত ছোটোকাগজ : মুক্তগদ্য

লেখকের অন্যান্য পোস্ট

লেখকের সোশাল লিংকস:
Facebook

Tags: , ,

লেখকের অন্যান্য পোস্ট :

সাম্প্রতিক পোষ্ট